Saturday, August 29, 2015

ওঁদের আনন্দ–দুপুর

ক্রীড়া প্রতিবেদক | আপডেট:


দাপিয়ে ক্রিকেট খেলে গাজীপুর গ্লোরিয়াসের প্রতিবন্ধী ব্যাটসম্যান শরীফুল ইসলাম (বাঁয়ে) বুঝিয়ে দিলেন ‘আমরাও পারি’। হুইলচেয়ারে বসেও বোলিং করলেন মোহাম্মদ মোহসিন। কাল বিসিবি একাডেমি মাঠে l প্রথম আলোচোখে আলো নেই ওঁদের। কিন্তু হৃদয়ের আলো দিয়ে ঠিকই দেখলেন প্রিয় তারকাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্র আবদুল মতিনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ। এই অলরাউন্ডারের জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন মতিন। মাহমুদউল্লাহকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আশপাশে থাকা আরও কয়েকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাহমুদউল্লাহর শরীর ছুঁয়ে দেখলেন। কেউ মাথায়, কেউ পিঠে হাত বুলিয়ে প্রিয় ক্রিকেটারকে ‘দেখার’ চেষ্টা করলেন।
শুধু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহযোগিতায় বোর্ডের একাডেমি মাঠে শারীরিক, বুদ্ধি ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের মেলাই বসিয়েছিল বেসরকারি সংগঠন ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)।
মাঠে শারীরিক প্রতিবন্ধী দুই দল ঢাকা অ্যাভেঞ্জার্স ও গাজীপুর গ্লোরিয়াস খেলল ‘সিক্স-এ-সাইড’ ক্রিকেট ম্যাচ। দর্শক হিসেবে ম্যাচটি উপভোগ করেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে ২ আগস্ট শেষ হওয়া স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড গেমসের পদকজয়ী বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। বিসিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, আর এই খেলোয়াড়দের মাঝে সেতুবন্ধ হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। কখনো তিনি দর্শক। কখনো ক্রিকেটার। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে এই আয়োজনে উপস্থিত মাহমুদউল্লাহর বলে ছক্কা হাঁকালেন বার্নিকাট। শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের সঙ্গেও কিছুটা সময় কাটালেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী আইন বিল (আমেরিকানস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাক্ট) পাসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ খেলার উদ্যোগ নেয় পিডিএফ। এজন্যই হাসিমুখে এগিয়ে এসেছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসও।
গাজীপুর গ্লোরিয়াসের ব্যাটসম্যান শরীফুল ইসলাম যেন জীবন্ত ‘সংশপ্তক’। চালের কলের দুর্ঘটনায় পড়ে ডান পা আর ডান হাত হারিয়েছেন ছোটবেলায়। এক পায়েই দুর্দান্ত গতিতে ছুটলেন রানের জন্য, বলও করলেন এক হাতে—জীবনযুদ্ধে ছুটে চলারই প্রতীক হয়ে। চলার পথে বাধা এলেও থামা যাবে না—এদের দেখেই অদম্য স্পৃহাটা সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন বার্নিকাট, ‘এখানে যাঁরা এসেছেন, সবাই নিশ্চয়ই এঁদের দেখে উদ্বুদ্ধ হবেন। আমার কথাই ধরুন। এতক্ষণ ক্রিকেট খেললাম, হয়তো ব্যাটে বলে লাগাতে পারিনি ঠিকমতো। কিন্তু ব্যাট চালিয়ে গেছি। এই ম্যাচটি শারীরিকভাবে সক্ষম ও অক্ষম মানুষের মধ্যে বৈষম্য কমানোরও বড় উদাহরণ।’
ক্যারিয়ারে কখনো মাহমুদউল্লাহর ব্যাট হেসেছে। কখনো দুঃসময় সঙ্গী হয়েছে। অদম্য প্রতিবন্ধীদের দেখে মাহমুদউল্লাহও পেলেন অনুপ্রেরণা, ‘এ অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। প্রতিবন্ধকতা জয় করেও কীভাবে ওরা এগিয়ে চলেছে, সেটা দেখে আমরাও কিছু শিখতে পারি।’
মাহমুদউল্লাহকে এত দিন শুধু টেলিভিশনেই দেখেছেন। কাল খুব কাছ থেকে দেখে আনন্দের সীমা ছিল না স্পেশাল অলিম্পিকস গেমসের সাঁতারে সোনাজয়ী পারুল আক্তারের, ‘মাহমুদউল্লাহ ভাইয়া আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না!’ স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড গেমসে ১৮টি সোনা জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সংবর্ধনা পায়নি অ্যাথলেটরা। এ জন্য একটু আক্ষেপই ঝরল বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিকস কমিটির চেয়ারম্যান শামীম মতিন চৌধুরীর কণ্ঠে। তবে মার্কিন দূতাবাস এবং পিডিএফের এই আয়োজনে তাঁর আক্ষেপ কিছুটা ঘুচেছে।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment